131 families rehabilitated due to river erosion, Mayor Gautam Deb to review the situation:শিলিগুড়ির মানুষ গত বছরের তিস্তার নদীভাঙনের কথা আজও ভুলতে পারেনি। হঠাৎ করে নদী ফুলে ওঠা জল, আর তার প্রবল স্রোতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল ডাবগ্রাম ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের লালটং চমকডাঙ্গি গ্রামের প্রায় পুরোটা। শতাধিক পরিবার রাতারাতি ঘরছাড়া হয়েছিল, মাথার ওপরের ছাদ, চোখের সামনে সাজানো সংসার, আর কষ্টের উপার্জনের সবকিছু নদীর জলে তলিয়ে গিয়েছিল। কেউ সন্তানদের কোলে নিয়ে কোথায় আশ্রয় খুঁজবে, কেউ আবার চোখের সামনে ভেঙে পড়া বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখে কেঁদেছিল। সেই সময় প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও হতবিহ্বল হয়ে গিয়েছিল, কীভাবে এতগুলো পরিবারকে বাঁচানো যায়। তবে সেই দুর্দিনের পরে এবার হাসি ফিরছে নদীভাঙনে নিঃস্ব ১৩১টি পরিবারের মুখে, কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তাদের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন ঠিকানা—তিস্তাপল্লী।উত্তরবঙ্গ সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হাতে ১৩১টি পরিবারের হাতে জমির পাট্টা তুলে দেন, সেই দৃশ্য যেন নতুন জীবনের আশার আলো দেখায়। ওই পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে শিলিগুড়ির মাজুয়া বস্তিতে। এই পুনর্বাসন প্রকল্পের নাম তিস্তাপল্লী, আর এই নামের মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে নতুন জীবনের গল্প। সোমবার তিস্তাপল্লীর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেখানে যান শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তিনি জানান, “রাজ্য সরকারের লক্ষ্য—একজন মানুষও যেন মাথার উপর ছাদ ছাড়া না থাকে। যাঁরা নদীভাঙনে সব হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের আওতায় স্থায়ী ঘর তৈরি করে দেওয়ার কাজ দ্রুত শুরু হবে। আমরা প্রতিটি পরিবারের সমস্যার দিকে নজর রাখছি।”
তিস্তাপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, ঘর হারানো মানুষগুলোর মুখে আজ একটু হাসি ফুটেছে। একসময় যাঁরা নিঃস্ব হয়েছিলেন, আজ তাঁরা নতুন করে সংসার সাজাচ্ছেন। চমকডাঙ্গির বাসিন্দা প্রমীলা মণ্ডল বলেন, “সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। মাথার উপর ছাদ ছিল না, বাচ্চাগুলো কাঁদছিল। তখন মনে হয়েছিল, আর বোধহয় কিছু থাকবে না। এখন নতুন ঠিকানা পেয়েছি, ধন্যবাদ মুখ্যমন্ত্রীকেই। ঘর পাওয়ার পরে মনে হচ্ছে আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারি।” তিস্তা নদীর তীরে হারিয়ে যাওয়া সঞ্জয় বর্মণ বলেন, “নদী আমাদের সব নিয়ে গিয়েছিল, মাটির ঘর, গরু, ফসল—সব শেষ। এখন নতুন করে শুরু করতে পারছি, এটা ভাবতে ভালো লাগছে। শুধু চাই, সরকার আমাদের পাশে থাকুক।” মেয়র গৌতম দেব গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি জানান, “এই তিস্তাপল্লী শুধু একটি পুনর্বাসন প্রকল্প নয়, এটা মানুষের জীবনের নতুন করে শুরু করার গল্প। রাজ্য সরকার প্রতিটি পরিবারের জন্য স্থায়ী ঘর, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা সবকিছু নিশ্চিত করবে।”এই ঘটনার প্রভাব শুধু ১৩১টি পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, গোটা ডাবগ্রাম এবং আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যেও একটা আস্থা তৈরি হয়েছে প্রশাসনের প্রতি।
স্থানীয় বাসিন্দা মলয় দাস বলেন, “আগে ভাবতাম, সরকার শুধু কথার কথা বলে। কিন্তু এই তিস্তাপল্লী প্রকল্প চোখের সামনে দেখে মনে হচ্ছে, সরকার সত্যিই মানুষের জন্য কিছু করছে।” তবে এও সত্যি, নতুন ঠিকানা পেলেও সমস্যার শেষ হয়নি। কিছু পরিবারের অভিযোগ, খাবার জল, শৌচাগার, স্কুলের ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। শিশুদের পড়াশোনার সমস্যাও রয়েছে। তাই অনেকেই চাইছেন, সরকার দ্রুত এই সমস্যাগুলোর সমাধান করুক। মেয়র গৌতম দেব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। এখানে স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি হল—সব তৈরি হবে।”রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নদীভাঙন সমস্যার সমাধান শুধু পুনর্বাসন নয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। বিশেষ করে তিস্তার মতো নদীর তীরে বাঁধ সংস্কার, নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, এবং নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কাজ করা জরুরি। আগামী দিনে আরও নদীভাঙন হলে যাতে মানুষ ঘরছাড়া না হয়, তার জন্য আগেভাগে পরিকল্পনা করা দরকার।