...
Friday, April 4, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্য১২৬ বছরের ঐতিহ্য,পীরবাবার মেলা শুরু রানীগঞ্জে

১২৬ বছরের ঐতিহ্য,পীরবাবার মেলা শুরু রানীগঞ্জে

126-year-old tradition, Pir Babar Fair begins in Raniganj রানীগঞ্জ খনি অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র মঙ্গলপুর রুনাই অঞ্চলে শুরু হল ঐতিহ্যবাহী পীরবাবার মেলা। ১২৬ বছরের পুরনো এই মেলা শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি সম্প্রীতি ও ঐক্যের এক প্রতীক। প্রতি বছর পীর বাবার ওরস উপলক্ষে এই মেলা বসে, যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন।রানীগঞ্জের এই পীরবাবার মাজার, যা “আস্থানা হুজুর গৌশে বাঙ্গালা, শামসুদ্দিন সাহেব” নামে পরিচিত, বহু বছর ধরে মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার কেন্দ্র হয়ে রয়েছে। কথিত আছে, পীরবাবা ছিলেন এক সাধক, যিনি মানবতার কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর থেকেই এই মাজারে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে।

প্রতিবছর তার প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে শুরু হয় দশদিনব্যাপী ওরস অনুষ্ঠান, যা একসময় শুধুমাত্র ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে বর্তমানে এই উৎসব পরিণত হয়েছে সম্প্রীতির এক বিশাল মিলনক্ষেত্রে।পীরবাবার মেলা শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নয়, এটি বহু ব্যবসায়ীর জীবিকার অন্যতম মাধ্যমও। এই মেলায় বিভিন্ন ধরনের দোকান বসে—খেলনা, মিষ্টির দোকান, কাসার বাসনপত্র, হস্তশিল্পের সামগ্রী, এবং বাহারি পোশাকের স্টল।

IMG 20230218 WA0049

এছাড়াও বিভিন্ন আকর্ষণীয় যাত্রাপালা, সার্কাস ও নাগরদোলার ব্যবস্থাও থাকে, যা ছোটদের থেকে বড়দেরও মন কেড়ে নেয়। এককথায়, এই মেলা শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি মানুষের মিলনক্ষেত্র এবং অর্থনৈতিকভাবে বহু মানুষের জীবিকার সংস্থান করে।পীরবাবার মেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ধর্মীয় সম্প্রীতি। শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ নন, হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, এমনকি অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও ভক্তিভরে এই মেলায় অংশ নেন। সকলের বিশ্বাস, পীরবাবার কৃপায় মনস্কামনা পূরণ হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ সিং বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই এই মেলায় আসছি। আমার ঠাকুরদাও আসতেন। এখানে এসে যে শান্তি পাই, তা আর কোথাও পাওয়া যায় না। ধর্ম আলাদা হলেও বিশ্বাস আমাদের এক করে রেখেছে।”বছরের পর বছর ধরে এই মেলায় মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই বছরেও কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাই, মেলা প্রাঙ্গণে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। নামখানা থানার ওসি জানিয়েছেন, “মেলার নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়োজনে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হবে।”এই মেলা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতিরও অন্যতম চালিকা শক্তি। ছোট দোকানদার, খাবারের ব্যবসায়ী, হস্তশিল্পের কারিগর—সকলের জন্যই এই মেলা বড় সুযোগ নিয়ে আসে। অনেক ব্যবসায়ী জানান, বছরের অন্য সময় তাদের ব্যবসা যতটা চলে, তার চেয়ে বেশি লাভ হয় এই কয়েকদিনের মেলায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আলম শেখ বলেন, “আমার মাটির হাঁড়ি-বাসনের দোকান আছে। সারা বছর ঠিকঠাক বিক্রি হয় না, কিন্তু এই মেলার সময় প্রচুর মানুষ কেনাকাটা করেন।”রানীগঞ্জের এই ঐতিহ্যবাহী মেলাকে আরও বড় করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে প্রশাসনের। বর্তমানে শুধুমাত্র স্থানীয় ও আশেপাশের মানুষ আসলেও, ভবিষ্যতে এটি পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করতে পারে।

মেলার আয়োজক কমিটির প্রধান আবদুল হাকিম জানান, “আমরা চাই, এই মেলাকে আরও বড় করতে। সরকার যদি কিছু সহযোগিতা করে, তাহলে এই মেলা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।”একশো বছরের বেশি পুরনো এই মেলা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সম্প্রীতির বার্তা বহন করে। বর্তমান সময়ে যেখানে সাম্প্রদায়িক বিভেদ দেখা যায়, সেখানে পীরবাবার মেলার মতো উৎসব আমাদের শেখায়, কিভাবে ভালোবাসা ও ভক্তি দিয়ে সব বিভেদ ভুলে থাকা যায়।

১২৬ বছরের ঐতিহ্য,পীরবাবার মেলা শুরু রানীগঞ্জে

এখন দেখার বিষয়, আগামী বছরগুলোতে এই মেলা আরও কতটা বড় আকার নেয় এবং প্রশাসন কীভাবে এটিকে আরও উন্নত করে তোলে। তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, রানীগঞ্জের এই ঐতিহ্যবাহী মেলা যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে স্থান করে নেবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.