Friday, May 23, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্য৮ বছরের নাবালক খুনের অভিযোগ ১২ বছরের বালকের বিরুদ্ধে

৮ বছরের নাবালক খুনের অভিযোগ ১২ বছরের বালকের বিরুদ্ধে

12-year-old boy charged with murder of 8-year-old minor:উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের কুলিয়া গ্রাম, যেখানে প্রতিদিনের মতই শিশুরা মাঠে ছুটে যায় খেলতে, সেখানেই ঘটে গেল এমন এক মর্মান্তিক ঘটনা যা চিরতরে কেড়ে নিল একটি নিষ্পাপ প্রাণ—মাত্র ৮ বছরের রাহুল মন্ডলের মৃত্যুতে আজ সেই গ্রামের বাতাসেও যেন অশান্তির ছায়া। বুধবার বিকেলে রাহুল প্রতিবেশী ছেলেদের সঙ্গে খেলতে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও পরিবারের হাতে কোনো খোঁজ না আসায় শুরু হয় দিশেহারা খোঁজাখুঁজি। আর তারপরেই, বৃহস্পতিবার সকালে গ্রাম থেকে কিছুটা দূরের একটি পুকুরে ভেসে ওঠে সেই নিথর দেহ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি রাহুলের পরিবারের অভিযোগ—তারা দাবি করেন, রাহুলের দেহে একাধিক মারধরের চিহ্ন রয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসে প্রতিবেশী ১২ বছরের এক নাবালকের নাম, যে কিনা আগেও একাধিকবার মারধরের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

রাহুলের মা অশ্রুসজল চোখে বলেন, “আমার ছেলে শান্তশিষ্ট ছিল, সবার সঙ্গে মিশত। ওই ছেলেটা ওকে আগেও মারত, এবার শেষ করে দিল। আমি বিচার চাই।” এই ঘটনার পর বাগদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে রাহুলের পরিবার। পুলিশ তদন্তে নেমে শুক্রবার অভিযুক্ত নাবালককে গ্রেপ্তার করে জুভেনাইল আদালতে পেশ করে। এই খবরে কুলিয়া গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে চাঞ্চল্য, শোক আর আতঙ্ক। গ্রামবাসীরা একদিকে যেমন দোষীর কঠোর শাস্তি চান, অন্যদিকে ১২ বছরের অভিযুক্ত শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত তাঁরা।

অভিযুক্ত নাবালকের ঠাকুমা জানিয়েছেন, “রাহুল প্রায়ই আমাদের বাড়িতে খেলতে আসত। ওদের মধ্যে ঝগড়া হতো, কিন্তু এমন ঘটবে ভাবতেই পারিনি। পুলিশ আমার নাতিকে নিয়ে গেল, আমরা সত্যিই বুঝতে পারছি না কী হয়েছে।” এই ঘটনার পর বাগদা থানা সূত্রে জানা যায়, শিশুটির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং রিপোর্ট আসার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অন্যদিকে, সমাজকর্মীদের একাংশ বলছেন, “এই ঘটনার পেছনে শুধুই রাগ বা হিংসা নয়, হয়তো মানসিক বিকাশে কোনো সমস্যা ছিল অভিযুক্ত নাবালকের। এখন জরুরি বিষয় হচ্ছে—ওর মানসিক অবস্থার মূল্যায়ন এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।”

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, “শিশুরা যেভাবে বড় হচ্ছে, তাতে তারা অনেক সময় অনুভূতির সঠিক বহিঃপ্রকাশ করতে শেখে না। এমনকি যাদের বাড়িতে সহিংসতা বা মারধর দেখা যায়, তারাও সেটা নিজেদের আচরণে প্রতিফলিত করে। এক্ষেত্রে সমাজ, পরিবার এবং বিদ্যালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” স্থানীয় শিক্ষক শান্তনু মজুমদার জানান, “এই দুই শিশুই আমাদের স্কুলের ছাত্র ছিল। আমরা কখনও ভাবতে পারিনি এমন ঘটনা ঘটবে। স্কুলে কাউন্সেলিং বাড়ানো দরকার।”

এই ঘটনাটি এক গভীর সামাজিক সংকেতও বয়ে আনছে—শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, তাঁদের আচরণগত বিকাশ, পারিবারিক পরিবেশ এবং পাড়ার সমর্থন ব্যবস্থা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। কুলিয়া গ্রামের অভিভাবকদের মধ্যে এখন চরম উদ্বেগ, তাঁদের কথায়, “আমাদের ছেলেমেয়েদের আমরা কার হাতে রাখব? পাড়ার ছেলের হাতেই যদি প্রাণ যায়, তাহলে কোথায় নিরাপত্তা?” একদিকে ছোট্ট রাহুলের অকালপ্রয়াণ, অন্যদিকে ১২ বছরের একটি ছেলের জীবনই বদলে গেল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। এই ঘটনার অভিঘাত শুধু দুই পরিবারের নয়, গোটা সমাজের বুকে এক গভীর ক্ষতের মতো।

পুলিশ ও শিশু সুরক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তের মানসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটও খতিয়ে দেখা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়। এদিকে শিশু অধিকার কর্মী রেনু সরকার বলছেন, “শিশুদের মধ্যে হিংসা কেন বেড়ে চলেছে, তা নিয়ে এখনই গবেষণা দরকার। শুধু শাস্তি নয়, প্রয়োজন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।”

এই ঘটনা কুলিয়া গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে এক ধরনের অবিশ্বাস আর আশঙ্কার বাতাবরণ তৈরি করেছে। সবাই বলছেন—“এর একটা শিক্ষা হোক, যেন আর কোনো রাহুল হারিয়ে না যায়, আর কোনো মা সন্তান হারিয়ে না কাঁদে।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments