1 killed in gold shop robbery in Siliguri:-শিলিগুড়ির শান্ত শহর, যেখানে প্রতিদিনের জীবনযাপন চলে সাধারণ গতিতে, হঠাৎই এক রাতে সবকিছু থমকে গেল। ২১ জুলাই রাতের অন্ধকারে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা—ক্ষুদিরাম পল্লির এক পরিচিত সোনার দোকান থেকে চুরি হয়ে গেল প্রায় ৭ লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কার। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় সৃষ্টি হয় ব্যাপক চাঞ্চল্য। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষ তো বটেই, আশপাশের অন্যান্য দোকানদার ও সোনার ব্যবসায়ীরা এই ঘটনায় বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাঁদের প্রশ্ন, রোজকার ব্যস্ত বাজারে এতটা নিরাপত্তা থাকার পরেও কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল?চুরির ঘটনার তিন দিন পর, অর্থাৎ ২৪ জুলাই, ভুক্তভোগী দোকান মালিক অবশেষে শিলিগুড়ি থানার অন্তর্গত পানিট্যাংকি ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের তরফেও তখন থেকেই শুরু হয় তৎপরতা। সিসিটিভি ফুটেজ, স্থানীয় সূত্র, এবং টেকনিক্যাল সার্ভিল্যান্সের মাধ্যমে তদন্ত শুরু করে শিলিগুড়ি পুলিশ। পুলিশের এই তৎপরতারই ফল—মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিউ জলপাইগুড়ি থানা এলাকার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে ধরা পড়ে যায় সন্দেহভাজন ব্যক্তি, নাম সঞ্জয় সূত্রধর। পুলিশ জানিয়েছে, এই সঞ্জয় খড়িবাড়ির বাসিন্দা এবং বেশ কিছুদিন ধরেই ওই ভাড়া বাড়িতে থাকছিল।

পুলিশি তল্লাশিতে তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কার। জানা গেছে, চুরি যাওয়া মোট স্বর্ণের মধ্যে এটাই ছিল মূল অংশ। তবে এখনও প্রায় ২ লক্ষ টাকার গয়না বাকি রয়েছে, যা সে হয়তো বিক্রি করে দিয়েছে কিংবা লুকিয়ে রেখেছে—এই সন্দেহেই তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন জানানো হয়েছে শিলিগুড়ি আদালতে। আজই তাকে আদালতে তোলা হয়েছে এবং তদন্তের স্বার্থে তার পুলিশ হেফাজত চেয়েছে তদন্তকারী দল।পুলিশের এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “চুরি যাওয়া গয়নার একটি বড় অংশ আমরা উদ্ধার করেছি। তবে প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। সঞ্জয়ের সঙ্গে আর কারা এই চক্রে রয়েছে, তা জানতেই রিমান্ডে নিয়ে জেরা করা হচ্ছে।”স্থানীয় দোকানদার সঙ্ঘের সভাপতি সঞ্জয় মৈত্র বলেন, “এমনিতেই বাজারে এখন ব্যবসা মন্দা। তার উপর এই ধরনের চুরি হলে আমরা নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। পুলিশের কাছ থেকে আমরা চাই, দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক, যাতে আর কেউ এমন দুঃসাহস না দেখায়।”
ঘটনার কথা জানতে পেরে শিলিগুড়ি পুরসভার এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, “এই এলাকায় নিয়মিত পুলিশি টহল থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনা আমাদের জন্য অশনি সংকেত। সিসিটিভি, আলোর ব্যবস্থা এবং প্রহরীর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে ভাবনা চলছে।”স্থানীয় মানুষদের অনেকেই বলছেন, চোরেরা হয়তো আগে থেকেই দোকানটির গতিবিধি নজরে রাখছিল। কারা কখন আসছে, কখন দোকান বন্ধ হচ্ছে, কীভাবে ভিতরে ঢোকা যায়—সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে তবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এলাকারই বাসিন্দা শিউলি ঘোষ বলেন, “রাতে প্রায়ই আমরা অচেনা লোকজন দেখতে পাই। মনে হয়, ওরা আগেই রেকি করে রেখেছিল।”বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল যে সোনার দোকান কিংবা মূল্যবান সামগ্রীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে হবে। শুধু সিসিটিভি নয়, আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নাইট গার্ড এবং প্রযুক্তিনির্ভর অ্যালার্ম সিস্টেম এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

এই ঘটনার পর আরও একবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে প্রশ্ন—একটা শহরের অভ্যন্তরে, যেখানে প্রশাসনের নজর থাকার কথা, সেখানে কি নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে কোনও ফাঁক থেকে যাচ্ছে? সোনার দোকানের মালিকরা বলছেন, বারবার অভিযোগ জানানোর পরেও পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা দেখা যায় না। অনেক দোকান এখনও পুরোনো লকিং সিস্টেম ব্যবহার করছে, যেখানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় চোরেরা সহজেই ঢুকে পড়ছে।অন্যদিকে, সঞ্জয় সূত্রধরের অতীত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আগে কোনও অপরাধের রেকর্ড ছিল কি না, সে কী কাজ করত, কারা তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত—এই সমস্ত তথ্যই এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি, তাকে জেরা করে জানা যাচ্ছে, চুরি করা স্বর্ণালঙ্কার সে কোথায় কোথায় নিয়ে গিয়েছে, কাদের কাছে বিক্রি করেছে বা লুকিয়ে রেখেছে।এই ঘটনার পর এলাকার আরও কিছু সোনার দোকান মালিক নিজেদের দোকান বন্ধ করে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। অনেকে রাতারাতি নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করেছেন, কেউ কেউ নতুন সিসিটিভি বসাচ্ছেন, আবার কেউ স্মার্ট অ্যালার্ম লাগাচ্ছেন যাতে ভবিষ্যতে এমন কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গে সংকেত চলে যায় পুলিশের কাছে।সব মিলিয়ে, শিলিগুড়ির ক্ষুদিরাম পল্লিতে একটি সোনার দোকানে এই চুরির ঘটনা শুধু একটি সাধারণ অপরাধ নয়—এটি আরও একবার শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার খামতি এবং সচেতনতার অভাবকে সামনে এনে দিল। পুলিশ এবার তদন্তে যতই তৎপর হোক না কেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক অনিশ্চয়তার ছায়া। এখন দেখার বিষয়, রিমান্ডে ধৃত সঞ্জয় সূত্রধরের কাছ থেকে আর কী কী তথ্য বেরিয়ে আসে এবং পুলিশ শেষ পর্যন্ত পুরো চক্রকে ধরতে পারে কি না।