Buyers in trouble to buy vegetables!: চলছে জগদ্ধাত্রী পূজার মরশুম, আর এই শেষ পর্বে উৎসবের রেশ ফুরালেও মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার যন্ত্রণা কিন্তু শেষ হয়নি। দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ভাইফোঁটা, দীপাবলি – সব উৎসবই এবার শেষ হয়েছে জাঁকজমক ভাবে, কিন্তু বাজারের অবস্থাও যেন তেমনই রয়ে গেছে। টাস্ক ফোর্সের বৈঠক হয়েছে, কিন্তু এর পরও সবজির দাম আকাশছোঁয়া রয়ে গেছে। আজ সকালে বাজারে গিয়ে ক্রেতারা মুখ পুড়লেন; অধিকাংশ সবজির দাম চড়চড় করে বেড়েছে, আর তাতে হাত পুড়েছে ক্রেতাদের।
বাজারে সবজি কিনতে এসে বেশিরভাগ ক্রেতাই সমস্যায় পড়ছেন। “এমন দামে সবজি কিনে চলতে পারছি না, উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই এখন দৈনন্দিন চাহিদার সামগ্রী কিনতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে,” বলেন মাধবী সেন, এক গৃহবধূ, যিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “বাজারে ঢুকতেই দেখি, চন্দ্রমুখী আলু ৪০ টাকা কেজি আর জ্যোতি আলু ৩৫ টাকা কেজি। পেঁয়াজ ৭০ টাকা, টম্যাটো ৮০ টাকা, ফুলকপি পিস প্রতি ৪০ টাকা, শসা ৬৫ টাকা আর ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা! কাঁচালঙ্কা তো ১০০ টাকায় ছুঁয়েছে। কেনার সময় দুবার ভাবতে হচ্ছে।”

এই দাম বৃদ্ধির কারণ নিয়ে কথা বললে বিক্রেতারা জানান, পূজোর মরশুমে সবজির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। “হিমঘরে মজুদ কমে গেছে,” বলেন স্থানীয় সবজি বিক্রেতা রতন দাস। “বাজারে যখন চাহিদা বেশি, তখন এইভাবে দাম ওঠানামা করে। আমাদের কিছু করার নেই। তবে দাম বাড়ার পেছনে অনেক কিছুই থাকে, যেমন পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। আমরা কম দামে কিনতে না পারলে তো আর কম দামে বিক্রি করতে পারি না।”
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ সত্ত্বেও বাজারের সবজি এখনো নাগালের বাইরে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকবার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সুফল বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে সস্তায় সবজি বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু খুচরো বাজারে সেই সুফল প্রকল্পের ছাপ পড়েনি। বাজারে এখনো অধিকাংশ সবজির দাম ক্রেতাদের হাতের বাইরে।
বাজারে আসা এক ক্রেতা, অমল সরকার বলেন, “আগে যে টাকা দিয়ে এক সপ্তাহের সবজি কিনতাম, এখন তাতে তিন দিনই কষ্টে চলছে। এখন প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমান সবজি কিনে কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছি। উৎসবের খরচ শেষ করতে না করতেই এভাবে দাম বাড়লে মধ্যবিত্তদের জন্য জীবনযাপন সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ে।”
আবার কিছু ক্রেতা এমনও বলছেন যে, এটি নিয়মিতই ঘটছে। “প্রতি উৎসবেই দাম বাড়ছে, আর তারপরে একটু একটু করে নামতে থাকে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই হয়তো সবজি কেনা কমিয়ে দিচ্ছেন বা শুধু সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোই কিনছেন,” বলেন বৃদ্ধা সরস্বতী মিত্র।
এদিকে, বাজারের এই দামের প্রভাব শুধু মধ্যবিত্তদের উপরেই নয়; নিম্নবিত্তদের অবস্থা আরও খারাপ। তারা প্রতিদিনের খাবারেও কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। “মাসের শেষে যখন হাতে তেমন টাকা থাকে না, তখন এই দাম আমাদের জন্য কষ্টের,” বলেন রিকশাচালক পরেশ পণ্ডিত।
এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতও স্পষ্ট নয়। অনেকেই বলছেন যে, পুরো পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান দরকার। নিয়মিত হিমঘরে যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি না হলে, এই দাম আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে আরও সমস্যা হতে পারে।
এই দাম বাড়ার কারণে একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও পড়তে পারে অর্থনীতির ওপর। যখন সাধারণ মানুষ সবজি কিনতে সঙ্কোচ করবেন, তখন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয়েও ক্ষতি হতে পারে, এবং তাদের ব্যবসাও দুর্বল হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে টাস্ক ফোর্সকে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে উৎসব মরশুমেও এই পরিস্থিতি না হয়।
এটি স্পষ্ট যে, এখন প্রয়োজন কেবল একটি সুনির্দিষ্ট নীতি, যা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হবে। কেবল উৎসবের সময় দামে নিয়ন্ত্রণ এনে সাময়িক স্বস্তি দেওয়া যাবে না; দরকার এমন একটি পরিকল্পনা যা বাজারের এই অনিয়ন্ত্রিত দামকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখবে।