বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে আসছে রেমাল, এক প্রবল ঘূর্ণিঝড় যা বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, আগামী রোববার সন্ধ্যায় এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে এবং এর ফলে উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আজ শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব তথ্য জানান।
আজ সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে, বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মাছ ধরার যানগুলোকে গভীর সমুদ্রে না যেতে বলা হয়েছে। এই নিম্নচাপ যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তবে এর নাম হবে ‘রেমাল’, যা ওমানের দেওয়া। রেমালের অর্থ ‘বালু’। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ‘রেমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড় হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। খুলনা থেকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মাঝামাঝি স্থানে এটি আঘাত হানতে পারে। অপেক্ষাকৃত বেশি এলাকা ধরে ঘূর্ণিঝড়টির বিস্তৃতি থাকতে পারে। সমুদ্র উপকূলের সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।’
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে প্রবল ‘ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তা হয় ‘সুপারসাইক্লোন’। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগের বা সামনের অংশের প্রভাব রোববার সকাল থেকেই বোঝা যাবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, শনিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। রোববার থেকে বৃষ্টি আরও বাড়বে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা কতটুকু—এ প্রশ্নের জবাবে আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সম্ভাব্য সময় রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। এ সময় ভাটা চলবে। তাই এ সময় আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা কম। তবে রাত ১২টা বা এর পরে আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আছে।
আজ বেলা তিনটার পর আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিম্নচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। নিম্নচাপকেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটার মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপকেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে প্রশাসন ও সেবাদানকারী সংস্থাগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে যাতে জনগণের ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়। উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে এবং জরুরি সেবা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
যদিও এখনো নিশ্চিত নয় যে, রেমাল ঠিক কতটা ক্ষয়ক্ষতি করবে, তবুও সতর্কতা অবলম্বন করে এবং পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে মানুষজনকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে। আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং প্রকৃতির এই রুদ্র রূপে আমাদের সচেতন থাকা প্রয়োজন।
এবারের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব যে শুধু প্রাকৃতিক ক্ষতিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাবও ব্যাপক হতে পারে। উপকূলীয় এলাকার কৃষি এবং মৎস্য সম্পদে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হতে পারে এবং জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে আমাদের সকলের উচিত একযোগে কাজ করা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকা। সরকার, প্রশাসন এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে। আমরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবো।
আরও পড়ুনঃ- নিউটাউনে বাংলাদেশের সাংসদের রহস্যমৃত্যু