রানাঘাট, নদিয়া: রানাঘাটের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কয়েকদিন ধরে মধ্যরাতে গরু চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। জানা গিয়েছে, হরিয়ানার একটি গরু চোরের দল দীর্ঘদিন ধরে এই চুরি করছিলো এবং তাদের এই কাজের ধরন ছিল একেবারে সিনেমার গল্পের মতো। একের পর এক গরু চুরি হওয়ার পর রানাঘাট থানার পুলিশ সজাগ হয়। চিরুনী তল্লাশি চালিয়ে এবং গোপন সূত্রের মাধ্যমে পুলিশ ধীরে ধীরে পাচ্ছিল চোরদের অবস্থান এবং তাদের টিমের গোপন ঠিকানা।
গতকাল মধ্যরাতে রানাঘাট থানার আই.সি তন্ময় ভট্টাচার্য ও পিসি অফিসার পিন্টু প্রামাণিকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম নদীয়ার চাপড়া এলাকায় অভিযান চালায়। এরপর, তারা এক সিনেমার গল্পের মতো ১২ ফুট উঁচু প্রাচীর টপকে হবিবপুর এলাকার একটি জায়গায় গিয়ে হাজির হয়। সেখানে চুরি হওয়া গরু সহ একটি গাড়ি ও গরু চোরের দালালকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, এই গরু চোরদের দল হরিয়ানার বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু চুরি করে নদীয়ার চাপড়ায় বিক্রি করতো।
অথচ, এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত চক্র, যেখানে গরু চুরির পর, সেই চোরদের দালালরা নদীয়ার চাপড়ায় নিয়ে আসত এবং সেখানেই গরু বিক্রি করা হতো। এই চক্রের খোঁজ পাওয়া মাত্রই পুলিশ অভিযানে নামায় এবং চোরের দলকে একেবারে ফিল্মি কায়দায় ধরতে সক্ষম হয়। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা ১২ ফুট উঁচু প্রাচীর পার হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি এবং গরু চোরদের গ্রেপ্তার করেছি। এটি আমাদের জন্য একটি বড় সাফল্য।”
পুলিশ জানিয়েছে, এদিন ধরপাকড়ের পর, ধৃতদের আদালতে তোলা হবে। এবং এখন তারা আরও তদন্ত চালিয়ে গরু চুরি চক্রের আরও সদস্যদের ধরতে তৎপর। জানানো হয়েছে, গরু চুরির এই চক্রের পেছনে আরও অনেক সদস্য থাকতে পারে এবং তাদের অনুসন্ধান চলছে। এই ঘটনায় রানাঘাট এলাকায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, তবে এখন এলাকাবাসী পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে তাদের নিরলস পরিশ্রমের জন্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশ যে কৌশলে এই অভিযানে নেমেছিল, তা সত্যিই মনে রাখার মতো। কোনো এক সিনেমার গল্পের মতোই পুলিশ গোপনে চোরদের সঙ্গীরা কোথায় থাকবে, তার তথ্য সংগ্রহ করে সেই জায়গায় পৌঁছে তাদের গ্রেপ্তার করেছে। নদিয়ার চাপড়া অঞ্চলের মানুষের মধ্যে অনেকদিন ধরে গরু চুরির খবর ছিল, তবে এতদিনে পুলিশ সক্রিয় হওয়ার পর, এই চক্র ভেঙে গেছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই গরু চুরির চক্র কীভাবে এত দিন ধরে চলছিল, এবং গরু কেনার দালালদের সঙ্গে গরু চোরের যোগাযোগ কীভাবে ছিল। পুলিশের ধারণা, এই চক্রটি আরও ব্যাপক হতে পারে এবং এর সাথে আরও অনেকগুলি প্রভাবশালী লোক যুক্ত থাকতে পারে। এই ঘটনার পর, রানাঘাট থানার পুলিশ জানাচ্ছে যে তারা এই ঘটনার পেছনের পুরো জাল খুলে ফেলার জন্য আরও তদন্ত চালিয়ে যাবে।
এই ঘটনায় নদিয়ার স্থানীয় মানুষদের মধ্যে অস্বস্তি এবং উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে, তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃঢ় মনোবল এবং কঠোর পদক্ষেপের কারণে জনগণ তাদের প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারবে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এটা আমাদের জন্য বড় সাফল্য, পুলিশ যে কায়দায় তাদের ধরেছে, তা আমাদের গর্বিত করেছে। আমরা চাই পুলিশ এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিক।”
গরু চুরির মতো অপরাধের বিরুদ্ধে পুলিশের এই ধরনের উদ্যোগ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, এমনটাই মনে করছে সচেতন নাগরিকরা। ইতিমধ্যে রানাঘাট থানা জানিয়েছে যে, এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে তারা আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।
এখন প্রশ্ন থেকে যায়, এর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। পুলিশ কি পুরো চক্রটি ধ্বংস করতে পারবে? কি হবে সেসব দালালের সঙ্গে যারা গরু চুরির এই অবৈধ ব্যবসায় জড়িত? এসবই তদন্তের বিষয়। তবে, যে কোনো অপকর্মের বিরুদ্ধে সচেতন জনগণের এই ধরনের দৃঢ় প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে অপরাধীদের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে।
#Hashtags: #গরুচুরি #ফিল্মিকায়দায় #পুলিশঅভিযান #রানাঘাটথানা #নদিয়া #গরুচুরি চক্র #পুলিশক্র্যাকডাউন #গরুচুরি চক্র