
প্রতিদিনই আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের ফ্যাশন, হেয়ার স্টাইল, খাবারের রেসিপি, এবং সৃজনশীল ভিডিও দেখি। কিন্তু সম্প্রতি যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, তা দেখলে হয়তো আপনিও চমকে যাবেন। সারা শরীরে পাউরুটি জড়িয়ে এক তরুণী নাচছেন এবং সেই পাউরুটির পোশাকেই একটি রিল ভিডিও তৈরি করছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে ওঠে ভিডিওটি, যেখানে দেখা যাচ্ছে এক তরুণী তার শরীরে পাউরুটি জড়িয়ে রংচঙে চুড়িদার পরে বসে আছেন, এক ঝুড়ি পাউরুটির সামনে। প্রথমে একটি পাউরুটি তুলে খাচ্ছেন, তারপর বাকিগুলোতে হাত দিয়ে দেখছেন, এবং পরিশেষে সেগুলো দিয়েই পোশাক তৈরি করে নাচতে শুরু করেন। সেই নাচের অঙ্গভঙ্গি এবং অদ্ভুত পোশাকের সঙ্গে তার মৃদু ছন্দে নাচ সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট, শেয়ার পেতে থাকে। এই ভিডিওটি ইতিমধ্যেই তিন লক্ষেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
এমন ভিডিও যে নেটিজেনদের মধ্যে হাস্যরস তৈরি করবে, তা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু যে কারণে এই ভিডিওটি আলোচনায় এসেছে, তা কেবল হাস্যরসেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও উত্থাপন করেছে। সামাজিক মাধ্যমে এই ধরনের অস্বাভাবিক বা বিরক্তিকর বিষয় নিয়ে নানা মতামত তৈরি হয়েছে। কেউ এই ভিডিওটিকে খুবই মজার এবং সৃজনশীল মনে করেছেন, আবার কেউ আবার এই ধরনের পোস্টে খুব বেশি গুরুত্ব না দেওয়ার কথা বলেছেন। তাছাড়া, কিছু ব্যবহারকারী আবার এই তরুণীকে ‘উরফি জাভেদের বোন’ তকমা দিয়েছেন, যেহেতু উরফি জাভেদ তার অস্বাভাবিক পোশাক এবং সাহসী স্টাইলের জন্য পরিচিত।
এই ভিডিওটির মজার দিকটি হল যে, সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা এমন অনেক ধরনের রিল ভিডিও দেখি যেখানে সৃজনশীলতা এবং নতুন কিছু দেখানোর চেষ্টা থাকে। কিন্তু এই ভিডিওটির ক্ষেত্রে বিষয়টা একদমই অন্যরকম। একদিকে যেমন কিছু মানুষ এটিকে হাস্যকর এবং অদ্ভুত মনে করছেন, তেমনি অন্যদিকে কেউ কেউ এই ভিডিওটি দেখে চমৎকৃতও হচ্ছেন, তাদের মতে, এটি একধরনের ফ্যাশন এক্সপেরিমেন্ট। এই ধরনের ভিডিওগুলো শুধুমাত্র নাচ বা হাস্যরসের জন্য তৈরি হয় না, বরং এগুলো সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে নতুন নতুন ট্রেন্ড এবং আলোচনার সূত্রপাত ঘটায়।
ভিডিওর একজন নেটিজেন, সোহেল আহমেদ বলেন, “আমি প্রথমে ভাবলাম, এটা হয়তো কোনো মজার ভিডিও হবে, কিন্তু পরবর্তীতে বুঝলাম যে, এই তরুণী তার ফ্যাশন স্টেটমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে কিছু নতুন এবং অদ্ভুত ভাবনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এটা ঠিক যে পাউরুটি পোশাক হিসেবে ব্যবহার করা অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু এটি কিছুটা সৃজনশীলতার প্রতীক হতে পারে।”
অন্যদিকে, সমালোচনাকারী এক ব্যবহারকারী, সিমা দাস, মন্তব্য করেছেন, “এটা কোনোভাবেই সৃজনশীলতা নয়, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি অশ্রদ্ধা। পোশাক, যদি আমরা সেটা খাবারের মাধ্যমে তৈরি করি, তা আমাদের জীবনধারাকে বিপথগামী করবে।”
এছাড়া, এই ভিডিওটির মাধ্যমে আরও একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে – সোশ্যাল মিডিয়াতে সৃজনশীলতা ও হাস্যরসের সীমানা কোথায় শেষ হয়? এর প্রভাব আমাদের সমাজের প্রতিক্রিয়াতে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে? এটা আমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে, কোনও কিছু যে অন্যদের জন্য হাস্যকর হতে পারে, তা অন্যদের কাছে অশোভন বা অগ্রহণযোগ্যও হতে পারে।
তবে, এখানে আরেকটি দিক হলো – এমন অদ্ভুত বা অস্বাভাবিক ভিডিও ভাইরাল হলে কিছু সময়ের জন্য এই ধরনের ভিডিওগুলির মাধ্যমে ট্রেন্ড তৈরি হয় এবং তাদের আলোচনায় নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে আসা হয়। ঠিক যেমন গত কয়েক বছর ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের অদ্ভুত এবং শো-স্টপিং ফ্যাশন ট্রেন্ডগুলি ভাইরাল হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, উরফি জাভেদ তার সাহসী এবং অস্বাভাবিক পোশাকের জন্য প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। সে ক্ষেত্রেও মানুষ অনেকটা বিভক্ত, কেউ তাকে নিন্দা করেছেন, আবার কেউ তার স্টাইলের প্রশংসাও করেছেন।
তবে, এর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। অনেকের মতে, সোশ্যাল মিডিয়াতে এমন ধরনের ভিডিওগুলির কারণে যুবক-যুবতীদের মধ্যে অস্বাভাবিক ফ্যাশন বা ভাবনার প্রভাব পড়তে পারে। এই ধরনের ভিডিওগুলি কখনো কখনো সমাজে ভুল বার্তা পাঠাতে পারে। যদি আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করি, তবে এ ধরনের ভিডিওগুলো আমাদের সামাজিক মনোভাবের বিকৃতি ঘটাতে পারে।
আমাদের সমাজে একদিকে যেমন নতুন কিছু নিয়ে আলোচনা হয়, তেমনি কিছু পুরনো সংস্কৃতি এবং সামাজিক মানদণ্ডও থাকে যেগুলির প্রতি আমাদের সম্মান রাখা উচিত। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আমাদের দায়িত্ব হলো, যে কোনো বিষয় শেয়ার করার আগে সেটি আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি কি ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা মাথায় রাখা।
অবশেষে, বলা যেতে পারে যে, এই ভিডিওটি শুধুমাত্র একটি হাস্যকর ঘটনা নয়, বরং এটি আমাদের চিন্তা করার একটি সুযোগ দিয়েছে যে, নতুন কিছু তৈরি করার ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা এবং সামাজিক মূল্যবোধের মধ্যে সঠিক সীমানা কী হতে পারে।