ষষ্ঠ দফার ভোটের আগে উত্তপ্ত হয়ে উঠল নন্দীগ্রাম। বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠল। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক মহিলা বিজেপি কর্মীর। এছাড়াও কমপক্ষে ৮ জন বিজেপি কর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার গভীর রাতে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ার মনসা পুকুর বাজার এলাকায়। মৃত মহিলা কর্মীর নাম রথিবালা আড়ি। মহিলার ছেলে সঞ্জয় আড়িও এর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে থানা ঘেরাও করে বিজেপি। জানা যাচ্ছে, ভোটের আগে নন্দীগ্রামের এলাকায় রাতে পাহারা দিচ্ছিলেন ওই বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। সেই সময় রাত দুটো নাগাদ আচমকা বিজেপি কর্মী সমর্থকদের উপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। বাইকে করে এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের এলোপাথাড়ি কোপ বসাতে শুরু করে।
ঘটনায় রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রথিবালা। মাকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর ছেলে সঞ্জয় আড়ি গুরুতর হন। তাঁর শরীরের একাধিক জায়গায় কোপ লাগে। তিনিও রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এর পাশাপাশি অন্যান্য বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ওপরেও হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। তাতে ৮ জন বিজেপি কর্মী সমর্থক আহত হয়েছেন।খবর পেয়ে এলাকাবাসীরা সেখানে ছুটে আসলে দুষ্কৃতীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে গ্রামবাসীরা আহতদের উদ্ধার করে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা রথিবালাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার ছেলের অবস্থাও আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এই ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিজেপি। ঘটনার প্রতিবাদে নন্দীগ্রাম থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কর্মী সমর্থকরা।
এদিকে, এই ঘটনার জেরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এ প্রসঙ্গে বিজেপির নন্দীগ্রামের নেতারা দাবি করছেন, ভোটের আগে সন্ত্রাস তৈরির চেষ্টা করতে চাইছে তৃণমূল। উল্লেখ্য, বুধবারই নন্দীগ্রামে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে হামলা চালানো হয়েছে।
তবে তৃণমূলের এই অভিযোগে আমল দিতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, এটা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। তবে এদিনের ঘটনার প্রতিবাদের রাস্তায় গাছের ডাল ফেলে, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা।

নন্দীগ্রামের এই ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। তারা চায় দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক এবং অপরাধীরা শাস্তি পাক।
এদিকে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই ঘটনায় নন্দীগ্রামে ভোটের হাওয়া অনেকটাই বদলে যেতে পারে। বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়েই নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের আগে এই ধরনের সহিংস ঘটনা ভোটারদের মনোভাবেও প্রভাব ফেলতে পারে।
যদিও পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত চলছে এবং দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে। তবে এলাকাবাসীরা শান্তি চায় এবং রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বান জানাচ্ছে।
এই ঘটনায় সামগ্রিকভাবে নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এবং এই সহিংসতার পরিণতি ভবিষ্যতে আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।