...
Friday, April 4, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গআসানসোলজাতীয় সড়কে বাইসনের মৃত্যু

জাতীয় সড়কে বাইসনের মৃত্যু

শুক্রবার ভোরবেলা, চালসা থেকে নাগরাকাটার দিকে যাওয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের খুনিয়া মোড় এলাকায় ঘটে গেল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। একটি ছোট গাড়ি দ্রুতগতিতে চলার সময়, রাস্তা পারাপাররত একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বাইসনকে সজোরে ধাক্কা মারে। ধাক্কার তীব্রতায় বাইসনটি রাস্তার ধারে ছিটকে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। গাড়ির চালক গুরুতর আহত হন এবং তাঁকে দ্রুত সুলকাপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে মাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

এই ঘটনায় পরিবেশপ্রেমী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, বনদপ্তরের নিয়ম না মেনে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর ফলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় পরিবেশ কর্মী রমেশ রায় বলেন, “জাতীয় সড়কগুলি জঙ্গলের মধ্য দিয়ে গেছে, তাই চালকদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বনদপ্তরের পক্ষ থেকে স্পিড ব্রেকার ও সাইনবোর্ড লাগানো হলেও অনেক চালকই তা উপেক্ষা করেন। ফলে এমন দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে।”

খুনিয়া স্কোয়াডের রেঞ্জাররা জানান, “বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, যাতে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

বনদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ড ও স্পিড ব্রেকার বসিয়েছি। তবে চালকদের আরও সচেতন হতে হবে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় গতি নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি।”

স্থানীয় বাসিন্দা মীনা দেবী বলেন, “আমরা প্রায়ই রাতে গাড়ির হর্ন ও দ্রুতগতির কারণে আতঙ্কিত থাকি। বন্যপ্রাণীরাও বিপদে পড়ছে। প্রশাসনের উচিত আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।”

ppp

এই দুর্ঘটনা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বন্যপ্রাণী ও মানুষের সহাবস্থানের প্রশ্নটি আবারও সামনে এসেছে। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, “আমাদের শিশুদের মধ্যে এখন বন্যপ্রাণীর প্রতি ভয় ও সহানুভূতির মিশ্র অনুভূতি দেখা যাচ্ছে। এটি তাদের মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে।”

ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও বনদপ্তরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সড়কের পাশে আরও স্পিড ব্রেকার বসানো, সাইনবোর্ডের সংখ্যা বাড়ানো এবং নিয়মিত সচেতনতা কর্মসূচি চালানো প্রয়োজন। এছাড়া, চালকদের জন্য কঠোর নিয়মাবলী প্রণয়ন ও তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

পরিবেশবিদ অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, “বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া সড়কগুলিতে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া, স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।”

এই ঘটনাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বন্যপ্রাণী আমাদের পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং তাদের সুরক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব। সড়কে গাড়ি চালানোর সময় আমাদের আরও সতর্ক ও দায়িত্বশীল হতে হবে, যাতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আর না ঘটে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.