দক্ষিণ আফ্রিকার টিম্বাবতী গেম রিজার্ভের মাঝখানে, এক শান্ত সকালে হঠাৎ শুরু হয়ে গেল জঙ্গলের রাজা ও রানি’র এক অপ্রত্যাশিত নাটক। ঘটনাটি ছিল এমন যে, যেন সোজা কোনও প্রামাণ্যচিত্র থেকে উঠে আসা – কিন্তু এতে ছিল নাটক, ছিল উত্তেজনা, আর ছিল একেবারে অন্যরকম এক বার্তা। সম্প্রতি ‘এলরেডেলঅ্যাসবেস্টিয়াস’ (elredeelasbestias) নামে একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল থেকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওয় দেখা গেছে যে, এক সিংহ পর্যটকদের সামনে আদর করতে চেয়েছিল এক সিংহীকে, কিন্তু তার উল্টে রেগে গিয়ে ওই সিংহীর কাছেই ধমক খেয়ে গর্জে উঠল, মারও খেলো এবং লজ্জায় পিছিয়ে গেল ‘জঙ্গলের রাজা’। এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছেন পর্যটকেরা, হেসে কুটোপাটি নেটপাড়াও।

ভিডিওটি শেয়ার হওয়ার পর থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়ের গতিতে। ভিডিওর ক্যাপশন অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত Timbavati Private Game Reserve-এ। এটি ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের পাশেই অবস্থিত এবং প্রাকৃতিক বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত। পর্যটকেরা ওইদিন গাড়িতে করে গেম ড্রাইভে বেরিয়েছিলেন। তখনই একদল সিংহ-সিংহীর উপস্থিতি নজরে আসে। তাদের ঘিরে দাঁড়ানো ছিল একাধিক গাড়ি, অর্থাৎ পর্যটকরা একেবারে সামনেই ছিলেন এই ঘটনা ঘটার সময়।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পূর্ণবয়স্ক সিংহ, যার বয়স আনুমানিক ৫ থেকে ৭ বছর, সে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় এক সিংহীর দিকে, স্পষ্ট বোঝা যায়, সে মিলনের চেষ্টা করছে। কিন্তু সিংহী, যে ছিল অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী এবং শক্তিশালী, একেবারে ততক্ষণে প্রস্তুত ছিল না। পুরুষ সিংহটির আদরের চেষ্টা দেখে হঠাৎই সে উঠে দাঁড়ায়, গর্জে ওঠে, এবং এক লাফে সিংহটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার পর সিংহের গালে থাবা চালিয়ে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। পুরুষ সিংহটি হকচকিয়ে যায়, কয়েক পা পিছিয়ে যায়, কিন্তু রাণীর রাগ তখনও কমেনি। সে গর্জে আবারও হুমকি দেয়, স্পষ্ট করে দেয় – জোর করে আদর নয়, সম্মতির গুরুত্ব জঙ্গলের মধ্যেও সমান।
এই ঘটনা দেখেই অনেকে বলতে শুরু করেছেন – “এটা তো একেবারে #MeToo মুহূর্ত জঙ্গলের মধ্যে!” সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়াও ছিল তীব্র। কেউ লিখেছেন, “রাজা হতে গেলে সম্মান জানাতেও জানতে হয়!” আবার কেউ বলেছেন, “সিংহীর এই সাহসিকতাই দেখাচ্ছে প্রকৃত সমতা কোথায়!” দক্ষিণ আফ্রিকার বন্যপ্রাণ আধিকারিকরাও ভিডিওটি নিয়ে অবগত, যদিও তারা এখনও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেননি।

‘খবর বাংলা’এর তরফে দক্ষিণ আফ্রিকার বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ডঃ লুইস ম্যাথুস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এটা খুব স্বাভাবিক একটা আচরণ, যেখানে পুরুষ সিংহ প্রায়শই মিলনের জন্য এগিয়ে যায়, কিন্তু সিংহী যদি তাতে রাজি না হয়, তবে তারা তাদের রাগ স্পষ্টভাবেই প্রকাশ করে। সিংহীর এই রাগ কোনও ব্যতিক্রম নয়, বরং এটা তার প্রাকৃতিক স্বাধীনতার প্রতীক।”
এই ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকার পর্যটন শিল্পের দিক থেকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক জঙ্গল সাফারি করতে আসেন। তাদের মধ্যে অনেকে বন্যপ্রাণীর আচরণ বুঝতে চান, আবার কেউ কেউ নিছক অ্যাডভেঞ্চারের জন্য আসেন। এই ধরনের দৃশ্য পর্যটকদের কাছে যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই শিক্ষণীয়ও।
স্থানীয় এক গাইড থাবিসো এনকোসি, যিনি সেই দিনে ঘটনাস্থলে ছিলেন, তিনি জানান, “সিংহীটি বেশ আত্মবিশ্বাসী এবং সাহসী ছিল। এমন দৃশ্য আমরা মাঝে মাঝেই দেখতে পাই, কিন্তু এইভাবে পর্যটকদের সামনে এমন প্রকাশ্য চড়চাপড় সত্যিই বিরল।”
সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারীদের মধ্যে বহু মানুষ এই ভিডিওকে নারী স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। ভিডিওর নিচে একটি মন্তব্যে লেখা হয়েছে, “সিংহীও জানে – না মানে না!” এমন শক্ত বার্তা জঙ্গলের রাজা ও রানি’র মধ্যেকার সম্পর্কের নতুন মাত্রা খুলে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা থেকে আমাদের সমাজে একটা বার্তাও পাওয়া যায় – সম্মতি ছাড়া কোনও সম্পর্ক, তা মানুষ হোক বা পশু, গ্রহনযোগ্য নয়। সিংহের মত এমন প্রভাবশালী প্রজাতিও যখন এই ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান পায়, তখন আমাদের সমাজে তার প্রভাব না ফেলাটাই অস্বাভাবিক।
আমাদের ‘খবর বাংলা’ নিউজরুমে এই ভিডিওর ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই একটাই আলোচনা – এটা শুধুই একটি জঙ্গল কাহিনি নয়, এটা এক নারীর আত্মসম্মান ও স্বাধীনতার কাহিনি, যা গোটা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা হয়তো আরও জানতে পারবেন বন্যপ্রাণীদের আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে।
শেষে বলা যায়, জঙ্গলের মাঝখানে এক সরল অথচ দৃঢ় দৃশ্য আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি মাঝে মাঝেই আমাদের বড় শিক্ষাগুলো দিয়ে দেয়। যেখানে রাজাও শিক্ষা নিতে বাধ্য হয় রানীর রাগে! আর এই বার্তাটাই আজকে ‘খবর বাংলা’র পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।